আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে একজন নারীর জন্য পুরোদস্তুর হিজাবী হওয়াটা হয়তো একধরনের প্রতিবন্ধকতা’। এমন ভাবনা অনেক নারীই পোষণ করেন। কিন্তু প্রাচ্যের ওমন ধারনাকে বদলে দিয়ে নারীদের চ্যালেঞ্জিং পেশায় পুরোদস্তুর হিজাবী হয়েও কোন মুসলিম নারী যে সফল হতে পারে তার উৎকৃষ্ট উদাহারনই তৈরি করে দিলেন শাহনাজ নামের এক তরুনী । সময়ের কণ্ঠস্বরের পাঠক/পাঠিকাদের জন্য আজ থাকছে এই ব্যতিক্রমি নারী পাইলটের জীবনের নানা প্রতিকুলতা ও সফলতা নিয়ে একটি ফিচার। ফিচারটি সম্পাদনা করেছেন, আহমেদ তৌফিক, প্রকাশক সময়ের কণ্ঠস্বর।
আজকের দিনে একজন সফল নারী পাইলট শাহনাজ । আধুনিক উচ্চশিক্ষিতা আজকের দিনের সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই মেয়েটি ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতো আকাশে উড়ার। ছোট বেলা থেকেই বিমানবন্দরের পাশে নিজেদের বাড়ির ব্যালকনি থেকে যখনি প্লেন উড়ে যেতে দেখতো তখনি ভেতরের অদম্য ইচ্ছেগুলো খোঁচা দিতো সেদিনের ছোট্ট মেয়েটির হৃদয়ে । তবে খুব ছোট বেলা থেকেই পারিবারিক কঠোর অনুশাসন আর ইসলামিক রীতিনীতির সাথে বেড়ে উঠা এই মেয়েটির জীবনের লক্ষ্য পুরনে প্রথমেই বাঁধা হয়ে পরে তার হিজাব। তখন পর্যন্ত বিশ্বের কোথাও কোন নারী পাইলট সেভাবে ছিলোনা উপরন্তু শাহনাজ সবসময় থাকতেন হিজাবের পরিধান করেই। তবে নিজের দৃঢ়প্রত্যয় আর অভীষ্ট লক্ষ্য পুরনে এসব বাঁধা হতে পারেনি বেশিদিন।
শাহনাজ যখন নারী পাইলটের আবেদন করেছিলেন তখন পাকিস্তানের চাকুরী আবেদন পত্রের নিচেই লিখা থাকতো, ‘নারীদের জন্য আবেদন প্রযোজ্য নহে’। সেদিনের সেই প্রতিকুলতা কাটিয়ে শাহনাজ আজকের দিনে পুরো পাকিস্তানেই একজন অনুকরণীয় নারী।
সময়টা ২০১২ সাল। বিশ্বের প্রথম নারী ক্যাপ্টেন পাইলট হিসেবে পাকিস্তান এয়ারলাইন্সে নিজের চ্যালেঞ্জিং যাত্রা শুরু হয় শাহনাজ লাগহারির। সেই থেকে পথ চলা। এই পথ চলায় একের পর এক সাফল্য যেমন পেয়েছেন ঠিক তেমনি বাঁধা এবং বিপত্তির মুখেও পড়েছেন অনেকবার । ২০১৪ সালে এসে ওয়ার্ল্ড গিনেস বুকের রেকর্ডে ‘ বিশ্বের প্রথম হিজাব পরিধান কারী মুসলিম মহিলা ক্যাপ্টেন পাইলট হিসেবে নাম উঠে আসে শাহনাজ লাগহারির।
ঠিক এরপরেই সারাবিশ্ব জুড়ে শুরু হয় শাহনাজকে নিয়ে ব্যাপক কৌতুহল।
বাবার নাম নুর মোহাম্মদ। পেশায় একজন সফল ইঞ্জিনিয়র। মা গৃহিনী সালমা বেগমও একজন উচ্চবংশীয় শিক্ষিতা নারী। পরিবারে বাবা-মায়ের কাছ থেকেই নিজের লক্ষ্য পুরনের উৎসাহ পান শাহনাজ। ছোট বেলা থেকেই মানবতাবাদী ছিলেন তিনি। ইসলামে জঙ্গীবাদ এর বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন। স্কুলবেলা থেকে বান্ধবীদের নিয়ে বাবার সহায়তায় গড়ে তোলেন অসহায় শিশুদের উন্নত জীবন যাপনের জন্য একটি ফাউন্ডেশান। লক্ষ্য ছিলো জীবনে একদিন সফল হবেনই। আর সফল হলেই সেই অসহায়দের জন্য আরও ভালো কিছু করতে পারবেন। ব্যক্তি জীবনে স্বপ্নও দেখেন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়বেন তিনি।