বাংলাদেশ থেকে অনেক ক্ষেত্রে প্রতারণার শিকার হয়ে ভারতের যৌনপল্লীতে হাজির হচ্ছেন অসহায় নারীরা। প্রত্যন্ত অঞ্চলের অতিদরিদ্র্য পরিবারের সদস্যরা কখনো কখনো অর্থের লোভে মেয়েদের বিক্রি করে দেন বলে জানিয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা । এছাড়া ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে কিংবা বিদেশ যাওয়ার লোভ দেখিয়েও মেয়েদের যৌনপল্লীতে নেয়া হচ্ছে। তেমনি এক অসহায় কিশোরীর নির্মম যন্ত্রনার গল্প উঠে এসেছে একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্টে। সময়ের কণ্ঠস্বরের পাঠকদের সতর্কতার জন্য সেই অসহায় কিশোরীর গল্প থাকছে আজ ।
বরিশালের নিভৃত পল্লী থেকে পতিতা পল্লীর অন্ধকারে পতিত হওয়া নয় বছরের এক কিশোরীর যন্ত্রনার গল্প!
নিজের অজান্তেই কিশোরী মেয়েকে পতিতা বানিয়েছেন এক বাবা !বরিশালের নিভৃত এক পল্লীর ছোট্ট কিশোরী ফরিদা । বয়স তখন নয় বছর। গ্রামের খুব সাধারণ পরিবারে জন্ম ছিলো মেয়েটির। টানপোড়েনের সংসারে বৃদ্ধ বাবা নিজেও ছিলেন দিশেহারা। ঐ বয়সেই সামান্য টাকার বিনিময়ে অনেকটা ‘নিজের অজান্তেই’ নিজের কিশোরী মেয়েকে ঐ বৃদ্ধ বাবা তুলে দেন একদল ভয়ংকর নারী পাচারকারির হাতে। শৈশবেই ফরিদা হয়ে যায় ‘পতিতা’।
সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাওয়া বৃদ্ধকে একদিন রশিদ নামের একজন এসে বলে, ‘‘আপনার এই মেয়েকে আমাকে দিন, আমি ওকে নিয়ে যাবো, ও আমার বাসায় থাকবে, কাজটাজ করবে” অভাবের তাড়নায় সাতপাঁচ কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে যান ফরিদার বাবা।
তবে ভাগ্যের বিড়ম্বনা পিছু ছাড়েনি নয় বছরে বয়সী ঐ অসহায় কিশোরীর। তিনবেলা দু-মুঠো ভাতের নিশ্চয়তার স্বপ্ন দেখে বাড়ি থেকে বিদায় নেয়া ফরিদার শেষ অবধি ঠাই হয় কোলকাতায় এক পতিতাপল্লীর অন্ধকার কুঠুরিতে।
সন্তানের বয়সি মেয়েটিকে রশিদ নামের সেই লম্পট মানুষটি কোলকাতায় নিয়ে গিয়ে প্রতিরাতে ভয় দেখিয়ে নিজের যৌনক্ষুধা মেটাতো । এরপর তাকে নিয়ে বিক্রি করে দেয় পতিতাপল্লীতে। আর সেখানেই প্রতিরাতে মেয়েটির উপরে চলতো অমানবিক ‘ধর্ষণ’।
ফরিদার বক্তব্যে উঠে আসে রশিদ, ওমপ্রকাশ, মাহতাব নামের কজনের সাথে এক সময় পাঁচজন পুলিশও যোগ দেয় শিশুদেহ ভোগের নারকীয় উৎসবে। তারপর আরো নতুন নতুন ‘খদ্দের’ আসতে থাকে, দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে গিয়ে পতিতাবৃত্তির নিগড়ে এভাবেই বাঁধা পড়ে যায় ফরিদা ।
প্রতিরাতের পাশবিক অত্যাচার বেশি দিন সহ্য করতে পারেনি ফরিদা। হাসপাতালে যেতে হয় তাকে। সেই সুযোগেই মেলে পতিতাবৃত্তি থেকে মুক্তি। অবশ্য তখনই স্বাধীন জীবন মেলেনি, মিলেছিল কারাবাস। কারমুক্তির পর বড় অভিমান আর ক্ষোভ নিয়ে দেশে ফেরে ফরিদা। ক্ষোভটা বেশি ছিলো তার বাবার ওপর। লেখাপড়া না শিখিয়ে ওই বয়সে মেয়েকে অপরিচিতের হাতে তুলে দিয়ে যে বিপর্যয় ডেকে এনেছিলেন – তার জন্য বাবাকে ক্ষমা করতে পারছিল না ফরিদা। কানাজড়িত কন্ঠেই জানান, আর কোন মেয়েকে যেন তার বাবা এভাবে কারো হাতে তুলে না দেন ।
পরবর্তীতে সেই কিশোরীকে একটি বেসরকারী এনজিওর মাধ্যমে বরিশালে তার বাবার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয় । তবে ফিরিয়ে দেবার সময় ফরিদার বাবা নিজের ভুল অস্বীকার করে বরং দোষ চাপিয়ে দেয় তার মেয়ের উপরেই। ফরিদার বাবা জানায়, সেই সময় ফরিদা সারাদিন বাসায় থাকতোনা। খুবই চঞ্চল ছিলো। তাই অনেকটা বিরক্ত হয়েও কাজের জন্য অন্যের বাসায় পাঠাতে রাজি হয়েছিলেন তিনি ।